পলাশ বড়ুয়া::
উখিয়ার চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার হত্যাকান্ডের চার বছরেও রহস্যের জট খুলেনি। যদিও ঘটনার পর সন্দেহভাজন একাধিক নারী-পুরুষকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে স্বজন হারানোর বেদনায় ট্রমা কাটেনি এখনো কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়া ও নিহত মিলার পরিবারের। অপরদিকে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এমনটি জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তের স্বার্থে এ পর্যন্ত দুই সংস্থায় ৫ বার তদন্ত কর্মকর্তা রদবদল করা হয়েছে।
সর্বশেষ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো: কায়সার জানিয়েছেন, হত্যাকান্ডে জড়িত অপরাধীদের শনাক্তের কাজ চলমান রয়েছে। যেহেতু এর আগে একাধিক কর্মকর্তা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। সকল রিপোর্ট একত্রিকরণ এবং নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের তদন্ত করার জন্য পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) কে হস্তান্তর করা হয়। শুরুতে উখিয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। পরে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে পরিবর্তন করে তৎকালীন উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মজুমদারকে তদন্তের দায়িত্ব পালন করেন।
এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা রামু ফতেখাঁরকুল গ্রামের বাসিন্দা শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়ে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলার নম্বর জিআর ৪৭৮/২০১৯। এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামী করা হয়নি।
যদিও ঘটনার পরপরই জড়িত সন্দেহে নিহত সনি বড়ুয়া (৬)র মাতা রিপু বড়ুয়া এবং কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার ভাগ্নী জামাই রামু রাজারকুল এলাকার উজ্জ্বল বড়ুয়া, পশ্চিম রত্না এলাকার অসীম বড়ুয়া দ্বীপচাঁন (নিহত মিলার ভগ্নিপতি), পূর্বরত্না এলাকার কৃষ্ট বড়ুয়ার ছেলে রাশেল বড়ুয়াসহ আরো কয়েকজনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়।
এদের মধ্যে অসীম বড়ুয়া বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। বিনা অপরাধে আমাকে ২৪ দিন পিবিআই অফিসে আটকে রাখার পর ৬৪দিন জেল কাটতে হয়েছে। যার ফলে আমার আর্থিক, শারীরিক, পারিবারিক এবং সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি নৃশংস এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ দাবী করছি। একই ধরণের কথা বলেছেন, নিহত সনির বড়ুয়ার মা রিপু বড়ুয়া।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী শশাংক বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়ে-নাতীর শোকে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি। সেপ্টেম্বর মাস আসলেই দু’চোখে অন্ধকার দেখি। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় যেতে পারিনি।
তিনি বলেন, পিবিআই অফিসের দিকে গেলে মেয়ে-নাতীর শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। মামলার কোন অগ্রগতি দেখছি না। এ নিয়ে আমি হতাশ। নতুন করে সংসার শুরু করলেও কোন ভাবে ভুলতে পারছে না কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়া। তিনি বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর নিহত স্বজনদের উদ্দেশ্যে পূণ্যদানের জন্য সংঘদানের আয়োজন করা হয়। প্রিয় স্বজন হারানোর বেদনায় আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত করছে পিবিআই। মাঝে মধ্যে এসে তথ্য নিতে আসে। তবে আশানুরূপ অগ্রগতি দেখছি না। আমি আমার মা, স্ত্রী-পুত্র ও ভাইজি হত্যাকান্ডের জড়িতদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করছি।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি রবিন্দ্র বিজয় বড়ুয়া বলেন, দুই শিশুসহ একই পরিবারের চারজন হত্যাকান্ডের পরও এধরনের বিচারহীনতা জাতির জন্য অমঙ্গল ছাড়া কিছু নয়। তিনি বলেন, গত কিছুদিন আগেও জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়। এবং দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার রতœাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়ীতে তার মা সখি বালা বড়ুয়া (৬৫), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬)কে নৃশংস ভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এদের মধ্যে নিহত রবিন বড়ুয়া ও সনি বড়ুয়া রুমঁখাপালং হাতির ঘোনা সাইরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষার্থী ছিল।
পাঠকের মতামত